রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে ড. ইউনূসের ৩ প্রস্তাব
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগণের মর্যাদা ও নিরাপত্তা এবং অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি আমার সরকারের পূর্ণ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের অপেক্ষায় আছি। মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ সদর দফতরে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন এবং বৈঠকে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এ বৈঠক হয় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
বৈঠকে মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত জুলি বিশপ, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। বিশ্ব এই বিষয়ে কম সচেতন যে বাংলাদেশের শিবিরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক শিশু এই জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হয়। গত দুই মাসে আরও ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তা সত্ত্বেও, একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ব্যয়ের ক্ষেত্রে এত বেশি খরচ হয়ে চলেছে। এগুলো আমাদের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তাঝুঁকি। আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্পষ্টতই বাংলাদেশ তার ধৈর্যসীমায় পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যতই মানবিক দিক বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে নিয়োজিত থাকুক, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ অবধি জাতিসংঘের একাধিক সাধারণ পরিষদ, মানবাধিকার কাউন্সিল এমনকি নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিষয়ে রেজুলেশনে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার কথা বলা হয়নি। আফসোসের বিষয়, মিয়ানমারে সংকটের মূল কারণগুলোর সুরাহা না হওয়ায় গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও তাদের দেশে ফিরতে পারেনি।
তিনি বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের, তাদের আশ্রয়দাতাদের এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়; যখন রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্বের আকর্ষণ ও মানবিক সহায়তা হ্রাস পায়। বিক্ষিপ্ত গোষ্ঠীর লড়াই ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডসহ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ও অস্থিতিশীলতার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও জনগণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছে।
মিয়ানমারে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, যেখানে সব জাতিগত সম্প্রদায় শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে পারে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, আসিয়ান এবং মিয়ানমারের অন্য বন্ধুদেরসহ সব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় নেতাকে স্বীকার করতে হবে এবং অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে বলবো। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধনে।
তিনি বলেন, বিলম্বিত প্রত্যাবাসনের ফলে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার উভয়ের জন্যই মানবপুঁজির ক্ষতি হয়েছে। আমাদের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক পুঁজির দিকে নজর দেওয়া উচিত, যাতে তাদের রাখাইনে পুনরায় একত্র হওয়ার ক্ষমতা সময়ের সঙ্গে হারিয়ে না যায়। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অপর প্রান্তের রাখাইনদের কাছেও আমাদের খাদ্য, বাসস্থান, ওষুধ ও শিক্ষা পৌঁছে দিতে হবে। অবিভক্ত রাখাইন রাজ্যে বসবাসের জন্য দীর্ঘমেয়াদি আস্থা তৈরি করতে এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক সংহতির জন্য সৃজনশীল পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এর সঙ্গে মিলিত হতে হবে।
সংকট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়। মিয়ানমারের জনগণ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তা প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়বে। দুঃখজনকভাবে, রাখাইন রাজ্যে, জাতিসংঘের বেশির ভাগ সংস্থা এবং আইসিআরসি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা-প্ররোচিত বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে ড. ইউনূসের ৩ প্রস্তাব
১) জাতিসংঘের মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে একটি সব স্টেকহোল্ডারকে সম্মেলন আহ্বান করতে পারেন। সম্মেলনের সংকটের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা উচিত এবং উদ্ভাবনী ও অগ্রসর উপায়ে পরামর্শ দেওয়া উচিত।
২) ইউএন সিস্টেম ও বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান, শক্তিশালী করা দরকার। স্লাইডিং ফান্ডিং পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রিসোর্স বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে আরও রাজনৈতিক চাপ দিতে হবে।
৩) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যামূলক অপরাধ মোকাবিলায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির ব্যবস্থাকে গুরুত্বসহকারে সমর্থন করা। আমি আইসিসিতে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রসিকিউটর করিম খানের কাছ থেকে শুনানির অপেক্ষায় আছি। সামরিক জান্তা দ্বারা সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিকার মিয়ানমার দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তার চাবিকাঠি।
Admin / Admin
সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা
তারেক রহমানকে নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদন প্রকাশ
তারেক রহমানের বিমান ঢাকায় অবতরণ
তারেক রহমানের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে ডাঃ আমান উল্লাহর উদ্যোগে রামগতি-কমলনগরে দোয়া মাহফিল
সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কা, পে-স্কেল নিয়ে অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশ, জাপান EPA আলোচনা সমাপ্ত
অনেক ক্ষেত্রেই হ্রাস করে ফেলেছে অন্তর্বর্তী সরকার তার বৈধতা ---- দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপের উপর গুরুত্ব দিতে হবে -- ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ
শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম -মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব
কবি নজরুলের পাশে চিরনিদ্রায় থাকবেন ওসমান হাদি
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ
হাদির সংগ্রামী জীবন-আদর্শ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে: পরিবেশ উপদেষ্টা