ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পদ্মা রেল সেতু প্রকল্প নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার


মনিরুজ্জামান মনির photo মনিরুজ্জামান মনির
প্রকাশিত: ১৬-৮-২০২৫ দুপুর ১০:৪৪

জাতীয় গৌরবের প্রকল্পকে ঘিরে প্রমাণবিহীন তথ্য, পক্ষপাতদুষ্ট ভাষা ও বিকৃত উপস্থাপন—সংবাদ বিশ্লেষকের চোখে স্পষ্ট নীতি লঙ্ঘনের উদাহরণ।

সম্প্রতি পত্রিকায় পদ্মা রেল সেতু প্রকল্প নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট ও অডিট আপত্তি’ শিরোনামে দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য, সরকারি প্রক্রিয়া ও বিদ্যমান আইনি কাঠামো বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়—এটি কেবল তথ্যভ্রান্ত নয়, বরং সাংবাদিকতার নীতি ও দায়বদ্ধতার প্রতি এক চরম অবহেলা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি যে অভিযোগগুলো উঠেছে, তা নিয়ে নেপথ্যে ভিন্নধর্মী এক চিত্র ভেসে উঠছে। বহু পর্যবেক্ষক মনে করছেন—এ অভিযোগগুলো কেবল দুর্নীতির প্রশ্ন নয়, বরং বর্তমান মহাপরিচালককে লক্ষ্য করে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ।

প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সংস্কার পর্যন্ত মহাপরিচালক এর সাফল্য ও জনপ্রিয়তা নষ্ট করতেই এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করছে।


রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

পদ্মা রেল সেতু প্রকল্প দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য একটি যুগান্তকারী অবকাঠামো উদ্যোগ। শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি স্বার্থগোষ্ঠীর নজর ছিল এই প্রকল্পে। বিশাল বাজেটের কারণে ঠিকাদারি ব্যবসায়ী মহলে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বড় অবকাঠামো প্রকল্পে যেমন উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকে, তেমনি বাজেট বণ্টন নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বও দেখা দেয়। এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই প্রকৌশল পেশাজীবীরা অনেক সময় রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চক্রের টার্গেটে পড়েন।

অভিযোগের উৎস ও উদ্দেশ্য

সাম্প্রতিক অভিযোগগুলোতে উল্লেখিত অংক মূলত হিসাব নিরীক্ষার প্রাথমিক স্তরের ‘আপত্তি’, যা আদালত বা তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। অডিট আপত্তি মানেই দুর্নীতি নয়—এটি ব্যয় সংক্রান্ত প্রশ্ন উত্থাপনের একটি প্রক্রিয়া মাত্র।

রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে—প্রকল্পের কিছু ব্যয় আন্তর্জাতিক মান ও নিরাপত্তা শর্ত পূরণের জন্য অপরিহার্য ছিল, কিন্তু সেগুলোকে “অর্থ আত্মসাত” হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের অডিট আপত্তিতে উল্লেখিত ১৩,৩৬১ কোটি টাকার অংক আসলে দীর্ঘমেয়াদী হিসাব প্রক্রিয়ার অংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন—৭০-৮০% আপত্তি পরে ব্যাখ্যা বা সমন্বয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। তাই ‘মীমাংসা অযোগ্য’ বলা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

কেন টার্গেটে মহাপরিচালক?

দীর্ঘ সময় ধরে সফলভাবে বিভিন্ন বড় প্রকল্প পরিচালনা করা আফজাল হোসেন মহাপরিচালক হওয়ার পর থেকেই রেলওয়ের অপচয় রোধ, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ ‘কমিশন সংস্কৃতি’ কমানোর উদ্যোগ নেন।

এতে বহু প্রভাবশালী মহল আর্থিক সুবিধা হারায়। অভিযোগ রয়েছে—এই স্বার্থবঞ্চিত গোষ্ঠীই তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণবিহীন অনিয়মের গল্প সাজিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার করছে।


দুর্নীতি” আখ্যার বাস্তবতা

অডিট আপত্তি মানেই দুর্নীতি নয়। রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মতে—অনেক আপত্তি নথি-প্রমাণ জমা দিলে মিটে যায়। প্রকল্পের কোনো চূড়ান্ত তদন্ত বা আদালতের রায় এখনো হয়নি।

বিদেশি কন্ট্রাক্টরদের সাথে যোগসাজশ বা অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কিত অভিযোগও বাস্তবতা নয়—প্রতিটি বিল ও BOQ সরকারি অনুমোদনক্রমে চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়। একাধিক দপ্তরের অনুমোদন ছাড়া অর্থ ছাড় সম্ভব নয়।


উপদেষ্টাকে ঘিরে বিভ্রান্তি

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান শুরুতে কিছু ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নিলেও, আন্তর্জাতিক পরামর্শকদের সুপারিশ ও দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবায়ন পরিকল্পনার কারণে কিছু পরিবর্তন মেনে নেন। কিন্তু প্রভাবশালী মহল এটিকে ‘নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন’ হিসেবে অপপ্রচারের হাতিয়ার করেছে।


গণমাধ্যমে তথ্য বিকৃতি

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে নাম-পরিচয়সহ ব্যক্তিগত তথ্য এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে পাঠকের মনে সন্দেহ জাগে, কিন্তু প্রমাণের ঘাটতি থাকে। এলাকার পরিচয় বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক দিয়ে ‘দুর্নীতির সিন্ডিকেট’ গল্প বানানো সাংবাদিকতার নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে।


ষড়যন্ত্রের সম্ভাব্য লক্ষ্য

1. প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ বদলানো – প্রভাব হারানো গোষ্ঠীর পুনঃপ্রবেশ নিশ্চিত করা।

2. ব্যক্তিগত প্রতিশোধ – পদোন্নতি না পাওয়া বা কাঙ্ক্ষিত পদ হারানো ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া।

3. রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি – বিদেশি ঠিকাদারি স্বার্থ জড়িত থাকায় নেতৃত্ব পরিবর্তনের চাপ তৈরি।


অভিযোগ বনাম বাস্তবতা

প্রকাশিত অভিযোগ-হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট, অডিট আপত্তি প্রমাণ    
বাস্তবতা (প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণ)-সরকারি প্রকল্পে অডিট আপত্তি মানেই দুর্নীতি নয়। অধিকাংশ আপত্তি নথি-প্রমাণ জমা দিলে মিটে যায়। কোনো চূড়ান্ত তদন্ত বা আদালতের রায় হয়নি।

প্রকাশিত অভিযোগ-মহাপরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িত    দুদক, 
বাস্তবতা (প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণ)-পরিকল্পনা কমিশন, রেল মন্ত্রণালয়—কোনো সরকারি সংস্থার রিপোর্টে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

প্রকাশিত অভিযোগ-বিদেশি কন্ট্রাক্টরদের সাথে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ    
বাস্তবতা (প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণ)-প্রতিটি বিল ও BOQ সরকারি অনুমোদনক্রমে চু্ক্তিপত্র সম্পাদিত হয়। একাধিক দপ্তরের অনুমোদন ছাড়া অর্থ ছাড় সম্ভব নয়।

প্রকাশিত অভিযোগ-মানহীন উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার    
বাস্তবতা (প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণ)-তিন স্তরের মান যাচাই ব্যবস্থা রয়েছে; কোনো আনুষ্ঠানিক রিপোর্টে মানহীনতার প্রমাণ নেই।

প্রকাশিত অভিযোগ-সরকারের কাছে তথ্য গোপন    
বাস্তবতা (প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণ)-সব আর্থিক ও কারিগরি রিপোর্ট নিয়মিত মন্ত্রণালয় ও নিরীক্ষা অফিসে জমা হয়, যা তথ্য অধিকার আইনে প্রাপ্তিযোগ্য।

সাংবাদিকতা পরিপন্থী ও আইনানুগ পদক্ষেপযোগ্য বিষয়

1. ব্যক্তিগত নাম নিয়ে সরাসরি দুর্নীতির দায় চাপানো।

2. দুদকের কর্মকর্তাকে “ব্যবসায়িক পার্টনার” বলা।

3. উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ধামাচাপা’ অভিযোগ।

4. অশালীন ভাষা ব্যবহার – “নাটের গুরু”, “অগাধ অর্থের মালিক” ইত্যাদি।

5. অডিট রিপোর্ট বিকৃতভাবে উপস্থাপন।

6. জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণকারী মন্তব্য – বিদেশি ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে যোগসাজশের অভিযোগ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ করতে পারে।


সম্ভাব্য আইনি ব্যবস্থা

ফৌজদারি মামলা – দণ্ডবিধি 500/501/502 ধারা অনুযায়ী।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন – মিথ্যা তথ্য ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার।
সিভিল মামলা – Defamation suit করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি।
প্রেস কাউন্সিল আইন – নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ।
Official Secrets Act – রাষ্ট্রীয় নথি বিকৃতভাবে প্রকাশ।

সংবাদ বিশ্লেষকের মন্তব্য

পদ্মা রেল সেতু কেবল একটি অবকাঠামো নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতীক। এমন প্রকল্পকে ঘিরে প্রমাণহীন, পক্ষপাতদুষ্ট ও উত্তেজনামূলক প্রতিবেদন শুধু সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে না—বরং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ, আন্তর্জাতিক সুনাম এবং জনগণের আস্থার ওপর সরাসরি আঘাত।

আইন অনুযায়ী, প্রমাণ ছাড়া ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক মানহানিকর বক্তব্য দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই এই ধরনের সংবাদকে সাংবাদিকতার পরিপন্থী, রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী এবং নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত।


গণমাধ্যম গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ—তথ্য যাচাই, উভয় পক্ষের মতামত গ্রহণ এবং দায়িত্বশীল ভাষা ব্যবহারই সাংবাদিকতার প্রাণ। প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ, আংশিক তথ্যের অপপ্রচার ও আবেগপ্রবণ শব্দচয়ন কেবল সাংবাদিকতার মর্যাদা নয়, পাঠকের আস্থাও নষ্ট করে। জাতীয় উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা আজ সময়ের দাবি।

Rp / Rp

নারীর অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি জরুরি : শারমীন এস মুরশিদ

জাপানি ভাষা জানা ১ লাখ কর্মী নিবে জাপান -- অর্থ উপদেষ্টা

আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে - স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পাট পণ্যের নান্দনিকতা ও ব্যবহারিক উপযোগিতাকে প্রাধান্য দেওয়ার আহবান বাণিজ্য উপদেষ্টার

২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত অপরাধের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তুলনামূলক সার্বিক চিত্র দেওয়া হলো

কাঠামোগত দুর্নীতি বাংলাদেশকে পিছিয়ে রেখেছে - উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি রয়েছে - স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কিত গবেষণালব্ধ ফলাফল নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে এবং জনহিতকর কাজে প্রয়োগ করা হবে - খাদ্য সচিব মোঃ মাসুদুল হাসান

জাতীয় স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক গণমাধ্যম অপরিহার্য - পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পার্টনারস ইন পপুলেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর নতুন সভাপতি তিউনিসিয়া ও নতুন নির্বাহী পরিচালক নাইজেরিয়ার ড. জোসেফ

পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে - স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

লেখক-গবেষক, রাজনীতিক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর এর মৃত্যুতে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের শোক প্রকাশ

ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় সমাবর্তন ২০২৫ অনুষ্ঠিত