ঢাকা রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫

কালাইয়ে আশ্রয়ণের ঘরে ঝোলে তালা! আবার বিক্রিও করেছেন অনেকেই


মটলুব হোসেনের, জয়পুরহাট photo মটলুব হোসেনের, জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১৯-৪-২০২৫ দুপুর ১:৪৯

জয়পুরহাটের কালাইয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘরগুলোর বেশিরভাগই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে অনেকেই অন্যত্র বসবাস করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ঘর ভাড়া দিয়েছেন, আবার অনেকেই নিজ নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘর বিক্রিও করেছেন। প্রকৃত ভূমিহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হলেও অনিয়ম করে পছন্দের লোকজনদের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে গেছে। সাথে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে।
জানা যায়, বিগত ২০১৮ সালে কালাই উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ দফায় মোট ১৭৮টি আধা-পাকা দেওয়াল ও উপরে টিনের ছাউনি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘরের জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। সুবিধা ভোগীদের জন্য প্রতিটি ঘরের সঙ্গে দুই শতক সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়, যাতে করে তারা স্বাবলম্বী হতে পারেন। ঘরগুলোর অবকাঠামোর মধ্যে ছিল দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি শৌচাগার, বিদ্যুৎ সংযোগ সহ সুপেয় পানির ব্যবস্থা। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সরকারি উদ্যোগটি দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কবলে পড়ে প্রকৃত ভূমিহীনদের পরিবর্তে যাদের নিজস্ব ঘর-বাড়ি আছে তারপরও রাজনৈতিক পরিচয় ও সুপারিশ প্রাপ্তদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই সেখানে না থেকে নিজস্ব বাড়ি-ঘরে ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই তালা ঝুলিয়ে কর্মের জন্য ঢাকা সহ অন্যান্য শহরে পাড়ি জমিয়েছে। অনেকেই আবার নিজের বাড়ী থাকায় বরাদ্দ পাওয়া ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন।  
সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরে তালা ঝুলছে। ঘরগুলোর ভিতর-বাহিরে মাকড়সার জাল জমেছে। বারান্দায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ দেখা গেছে। যাদের নামে ঘরগুলো বরাদ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রথম থেকেই আশ্রয়ন পল্লীর ঘর ছেড়ে নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করছেন। আর ঘরগুলোর তালা ঠিক আছে কি না, তা দেখার জন্য মাঝে মধ্যে তারা আশ্রয়ন পল্লীতে আসেন। একই চিত্র কালাই উপজেলার সব আশ্রয়ণ প্রকল্পেই লক্ষ্য করা গেছে। 
উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বলিগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘরের মধ্যে ৮টি, একই ইউনিয়নের কাঁটাহার আদর্শ গ্রামে ৫৮টি ঘরের মধ্যে ২৭টি, উদয়পুর ইউনিয়নের বিনইল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৫টি ঘরের মধ্যে ১৮টি, শ্রীপুর গ্রামে ১০টি ঘরের মধ্যে ৪টি, জিন্দারপুর ইউনিয়নের বাদাউচ্চ আদর্শ গ্রামে ১০টি ঘরের মধ্যে ৬টি এবং পুনট ইউনিয়নের নান্দাইল দীঘি গ্রামে ১৫টি ঘরের মধ্যে ৭টি মিলে মোট ১৭৮টি ঘরের মধ্যে ৭০টি ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তদের কেউ বসবাস করছেন না। ঘরগুলোতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এসব ঘর নিয়ে আবার স্থানীয়দের নানা অভিযোগও রয়েছে। যাদের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশেরই নিজস্ব জায়গায় বাড়ী-ঘর আছে। তারা নিজস্ব বাড়ী-ঘরেই বসবাস করেন। তারা অনেকেই ঘরগুলো বিক্রি করেছেন। আবার কেউ ভাড়া দিয়ে অন্যত্র গিয়ে কর্ম করছেন। তাহলে তারা কেন এসব আশ্রয়ন পল্লীতে বসবাস করবেন।  
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলোর মধ্যে অনেকেই খুব অল্প টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে ঘরগুলো বিক্রি করেছেন। আবার কেউ ভাড়া দিয়েছেন। উদয়পুর ইউনিয়নের বানপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ পায় সেলিনা বিবি ও রাজিয়া খাতুন। বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই তারা সেখানে বসবাস করেন না। তারা নিজ নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘর দুটি মাত্র ৭৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। আবার শিউলী বেগম নামে এক নারী তার ঘর মাত্র ৫০ হাজার টাকায় প্রতিবেশী মাজেদা বিবির কাছে বিক্রি করেছেন। অপরদিকে জিন্দারপুর আদর্শ গ্রামে শিল্পী আক্তার ও মজনু মিয়ার নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে তারা বসবাস করেন না। তবে ঘরের মালিকানা ধরে রাখতে তারা দুজনই ওই ঘরগুলোর বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করে আসছেন। ঘরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কেউ বসবাস না করায় স্থানীয় লোকজন এসব ঘরে গবাদিপশু লালণ-পালণ করছেন। রাতে এসব ঘরে গবাদিপশু থাকে বলেও শোনা গেছে। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত ভূমিহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হলেও অনিয়ম করে পছন্দের লোকজনদের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেরই নিজস্ব জায়গায় বাড়ি রয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে আশ্রয়ণের ঘরগুলোর বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘর বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছেন বানপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শিউলি বেগম। তিনি বলেন, গ্রামের মধ্যে আমার নিজস্ব একটি বাড়ী আছে। সেখানেই থাকি। এনজিওতে ঋণ ছিল তাই আশ্রয়ণের ঘরটি বিক্রি করেছি।
 এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বিগত সরকারের সময়ে এই ঘরগুলো নির্মান করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ঘর বরাদ্দের বিষয়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে। যারা ঘর পেয়েও সেখানে বসবাস করছেন না, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বরাদ্দ বাতিল করা হবে এবং প্রকৃত ভূমিহীনদের জন্য নতুন ভাবে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া যারা সরকারি ঘর বিক্রি বা ভাড়া দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Rp / Rp

দেলদুয়ার নাগরপুর বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী জুয়েল সরকারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা

জয়পুরহাটে বছর না ঘুরতেই সেতুতে ফাটল!

মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেফতার

মহাদপুরে মজুদ বিরোধী অভিযানে ৭ টি চাউল কলে ৬ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা

রাজশাহীতে ইউনিয়ন পরিষদেই মিলছে ‘কম্পিউটার প্রশিক্ষণ

‘ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধানাগার নির্মাণ প্রকল্প’ দৈনিক ২০ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি পাবে নগরবাসী

রাজবাড়ীতে মাদক - সন্ত্রাসের ভয়াল ছোবল; ঢাকায় যুবকের প্রতিবাদী অবস্থান

গারো পাহাড় সীমা‌ন্তে অজগর উদ্ধার : বনে অবমুক্ত কর‌লো বন বিভাগ

বাগেরহাটে যাত্রাপুর হাটের সরকারি জমিতে অবৈধ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধ

সাটুরিয়ায় এক গৃহবধুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

রেলওয়ে স্টেশনের ইঞ্জিন নয় কড়াই গাছের কোটরের আগুন দেখতে উপচে পরা মানুষের ভীড়

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রকি হত্যা মামলার দুই আসামি গ্রেফতার

কালাইয়ে শালকের ছুরিকাঘাতে ভগ্নিপতি নিহত