রাজশাহী ওয়াসা’র পানি সরবরাহে নতুন দিগন্ত

প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (রাজশাহী ওয়াসা) নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পানির গুণগত মান নিশ্চিতে নিয়মিত পরিদর্শন সহ সরবরাহ এলাকায় যে কোন সমস্য সমাধানে কাজের তড়িৎ গতি বেড়েছে পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ। পানি সরবরাহ, অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রাহকসেবা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এ প্রতিষ্ঠান এখন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পানি সরবরাহ সেবায় তাই নগরবাসীর কাছে আস্থার নাম রাজশাহী ওয়াসা।
রাজশাহীতে প্রথম পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয় ১৯৩৭ সালে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই ব্যবস্থা চালু করে রাজশাহী পৌরসভা। ১৯৮০ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও নেদারল্যান্ডস সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজশাহী পানি সরবরাহ মহা পরিকল্পনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যক্তিদের চাহিদা মেটাতে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন শাখা ২০১০ সালের আগস্ট মাসে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন হতে আলাদা হয়ে যায় এবং রাজশাহী ওয়াসা নামে রাজশাহী পৌর এলাকার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের একক কর্তৃপক্ষ হিসাবে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়।
বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানি দিন দিন কমে আসছে। চাষের জমি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এই পানি। গ্রীষ্মের খরতাপে এই অঞ্চলগুলোতে ভূ-গর্ভস্থ পানির নাব্যতা নিচে চলে যায়। এর ফলে গভীরনলকূপ ছাড়া পানি পাওয়া যায় না। তখন সীমাহিন কষ্টে পড়তে হয় এলাকাবাসীদের।
এই লক্ষে ভূ-গর্ভস্থ পানি বাচাঁতে এবং রাজশাহীর মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে পদ্মা নদীর পানি শোধন করে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। ৪ হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যায়ে ‘ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধানাগার প্রকল্প’ এর আওতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সারেংপুরে স্থাপন হচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। রাজশাহী ওয়াসা জানিয়েছে প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে ২৮ শতাংশ শেষ হয়েছে।
চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের সহায়তায় রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) অধীনে এই মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। রাজশাহীর জেলার পদ্মা নদীর পাশ্ববর্তী উপজেলার ভিতরে চারঘাটের ইউসূবপুর, পবা উপজেলার হরিপুর এবং গোদাগাড়ী উপজেলার সারেংপুর নদীর সম্ভাবতা যাচাই করা হয়েছিল। গোদাগাড়ী উপজেলা সারেংপুর এলাকায় পদ্মার শাখা নদী হিসেবে বেরিয়ে গেছে মহানন্দা। দুই নদীর মোহনায় সারা বছর এখানে ৩০ ফুট গভীর পানি থাকে। প্রকল্প গ্রহণের আগে স্থানটির সারা বছরের পানির গভীরতা নিয়ে ৩০ বছরের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করেছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম)। এরপরই সেখানে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজশাহী ওয়াসা। পাইপলাইনে পানি পবা উপজেলার হরিপুরে বুষ্টার প্লান্ট হয়ে ওয়াসার মাধ্যমে নগরবাসী পাবে এই পরিশোধিত পানি। পাশাপাশি এই প্রকল্পটির মাধ্যমে কাটাখালি, নওহাটা এবং গোদাগাড়ির ৩০টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নিরাপদ সুপেয় পানির সুবিধা পাবেন। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমবে।
পানি সরবরাহে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ঃ
রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (রাজশাহী ওয়াসা) প্রতিষ্ঠার সময় রাজশাহীতে পানির কাভারেজ ছিল ৫৬.৮৮ শতাংশ এলাকা জুড়ে, কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭.৫৮ শতাংশ এলাকায়। একই সঙ্গে বার্ষিক গড় পানি উৎপাদন ৬ কোটি ৩০ লাখ লিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ কোটি ৭ লাখ লিটারে। নগরীতে নতুন ৪০টি নলকূপ স্থাপন এবং ৮০টি নলকূপ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। পানির মানোন্নয়নে পাইপ লাইন নেটওয়ার্কে ১ হাজার ১ শো ৬৬টি ওয়াস আউট ও ৯০টি প্রবাহ মিটার বসানো হয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়ন
রাজশাহী শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে নতুন ৩৭৭.৫৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে মোট নেটওয়ার্ক ৪৮২ কিলোমিটার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫৯.৫৩ কিলোমিটারে। জরুরি সেবার জন্য ২টি পানির ট্যাংকার ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০টি জেনারেটর ক্রয় করেছে ওয়াসা। পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ৩২টি ওয়াটার পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
গ্রাহকসেবা ও রাজস্ব আয়
রাজশাহী ওয়াসার গ্রাহক সংখ্যা ২৬ হাজার ৫ শো ৬৫ থেকে বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৫ শো ৬৪ জনে। রাজস্ব আয়ও বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ। ২ কোটি ৮৩ লক্ষ্য টাকা থেকে ১৭ কোটি ১৩ লক্ষ্য টাকায় উন্নীত হয়েছে রাজস্ব আয়।
গ্রাহকসেবায় সহজীকরণ আনতে বিকাশ, রকেট, রাকাব ও একপে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছে ওয়াসা। এখন গ্রাহকরা সহজেই অনলাইনে পানি বিল পরিশোধ করতে পারছেন। এছাড়া গ্রাহকের মোবাইলে বিল সংক্রান্ত এসএমএস পাঠানোর সুবিধাও চালু করা হয়েছে যা আগে ছিলনা।
প্রযুক্তির অগ্রগতি
অটোমেশনের মাধ্যমে বর্তমানে ১২১টি পাম্প পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজস্ব সার্ভার স্থাপন, শতভাগ ই-জিপি ক্রয় প্রক্রিয়া এবং নিজস্ব ওয়েবসাইট চালুর মাধ্যমে ওয়াসা প্রযুক্তি নির্ভর কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করেছে। এতে সহজেই পানির বিস্তার এবং প্রক্রিয়াজত ব্যবস্থা সম্পর্কে বোঝা যায় এবং পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
গ্রাহকের মতামত
নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নয়ন আলী বলেন, “আগের তুলনায় ওয়াসার পানি এখন অনেক উন্নত হয়েছে। আগে পানিতে দূর্গন্ধ ছিল, যা পান করার অযোগ্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমরা গ্রাহকেরা অনেক ভালো পানি পাচ্ছি।”
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাইম ইসলাম এই বিষয়ে বলেন,“পানি আমাদের প্রতিদিন প্রয়োজন হয়। পানি ছাড়া আমরা চলতে পারিনা। ওয়াসা আমাদের পানি ব্যবস্থা সহজ করে দিয়েছে। ওয়াসা না থাকলে আমাদের সাবমারসিবল পাম্পে অনেক টাকা খরচ হতো। আমরা এখন সহজেই ওয়াসার লাইনের মাধ্যমে পানি পায়। তবে মাঝেমধ্যে পানিতে দূর্গন্ধ আসে। এই বিষয়ে আমি ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।”
একই এলাকার গৃহিণী হালিমা বেগম বলেন,“আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে পানি আবশ্যক। পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না। ওয়াসার পানি আমাদের সংসারের যাবতীয় কাজে ব্যবহার করি। অতি সহজে পানি আমাদের দোরগৌড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওয়াসাকে ধন্যবাদ জানাই।”
কর্তৃপক্ষ কি বলছে?
আয়রণন ও ব্যকটেরিয়ামুক্ত, পানযোগ্য স্বচ্ছ পানি নগরবাসী পাবে জানিয়ে রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মাহমুদ বলেন, “আমরা নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় পানির গুণগত মান রক্ষায় যে সকল উদ্যেগ গ্রহণ করা প্রয়োজন সেটিই করছি। তবে আগে ওয়াসার যেরকম অভিযোগ ছিল এখন কিন্তু সেগুলো আর নেই। তবে আগের চেয়ে বর্তমানে কিভাবে গ্রাহক সেবা আরো উন্নত করা যায়, আমরা সেটি নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছি। আমরা আশা করছি ভালো কাজে নগরবসীর আস্থা অর্জন করতে পারবো।”
Rp / Rp

সেপটিক ট্যাংকের ঝুঁকি ও করণীয় বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে ফায়ার সার্ভিস

বাগেরহাটের রামপালে নাগরিক ফোরাম গঠন

মাহাদেবপুরে ভ্রাম্যমান আদালত আত্রাই নদী থেকে নিষিদ্ধ ২৪টি রিং জাল ভষ্মীভূত করেছে

VBSZ পরিবারের উদ্যোগে ৬৬ শিক্ষার্থীর হাতে শিক্ষা উপকরণ

সাটুরিয়ায় ধানের শীষের প্রচার প্রচারণায় মুখর বিএনপির নেতাকমীর্রা

পীরগঞ্জে অবৈধ ব্যবসা, সন্ত্রাস ও মাদক দমনে কঠোর অভিযানের নির্দেশ, সাবেক সংসদ সদস্য

বাগেরহাটে ৪টি আসন বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, বুধ-বৃহ্স্পতি হরতাল

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে হলে সমতলের আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে

চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষার আকুতি - পাটকেলঘাটায় সংবাদ সম্মেলন

মাদারীপুরের শিবচরে যাদুয়ারচরে ময়লার খাল উদ্ধারের অভিযান

প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে যেতে রাজি নয় শরীয়তপুরবাসী

বাগেরহাটের ৪টি আসন পুনর্বহালের দাবিতে মোড়েলগঞ্জে হরতাল ও অবরোধ, স্থবির জনজীবন ব্যবসা-শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ
